করোনা মহামারীকালে ইফতারসহ সকল খাদ্যপণ্য ভেজাল মুক্ত রাখুন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন

করোনা মহামারীকালে ইফতারিসহ সকল খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার দাবিতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা ও বারসিকের যৌথ আয়োজনে আজ ১৪ এপ্রিল ২০২১ সকাল ১১ টায় অনলাইনে জুম প্লাটফর্মে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক মেসবাহ সুমনের সঞ্চলনায় আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, করোনা মহামারীকালে এই রমজানে খাদ্য পণ্যে ভেজালকারীদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিনষ্টকারীদেরকেও কোন ছাড় দেয়া দেয়া যাবেনা। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যে ভেজাল রোধে তিনটি আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ দেখা যায় না বরং অসাধু মুনাফাখোরদের দৌরাত্বে পবিত্র রমজান মাসে আর ব্যাপকভাবে খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়। এই করোনাকালে এগুলো রোধ করা না গেলে মহামারী আরও দীর্ঘায়িত হবে। আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন ৭১ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা: খালেদ শওকত আলী, বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ ও এবিএম তৌহিদুল আলম, ইন্টারফেইথ সেন্টারের সভাপতি মো: শহীদুল্লাহ, পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, বানিপার সাধারণ সম্পাদক এম ওয়াহেদ প্রমূখ।

 

খাদ্য মানুষের অন্যতম প্রধান মৌলিক অধিকার। খাদ্য গ্রহণ ছাড়া মানুষসহ কোনো প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না। তবে সে খাবার অবশ্যই হতে হয় বিশুদ্ধ। দূষিত বা ভেজালমিশ্রিত খাদ্য মানুষের জন্য স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে থাকে। শুরু হয়েছে মুসলমানদের পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। এই এক উপলক্ষ নিয়ে প্রতিবছর রাজধানীসহ সারা দেশে প্রচুর ইফতার জাতীয় খাবার বিক্রি হয়। এই সুযোগেই মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় ইফতারিতে অনায়াসে ভেজাল মেশায়। খাদ্যে ভেজাল এমন একটি নীরব ঘাতক, যা ধীরে ধীরে সুস্থ মানুষকে সুস্থ ধারা থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে।

 

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ইফতারসহ খাদ্যে হাইড্রোজ, রেড অক্সাইড, মনো সোডিয়াম গ্লুটামেট, ট্রান্সফ্যাট, ব্যবহৃত তেল, টেক্সটাইল ক্যামিকেল, বিপদজনক সুগন্ধি ও রাসায়নিক মেশানো বা ব্যবহার করা যাবে না। নিরাপদ খাদ্য জমি , খামার ও বাগানে নিরাপদ হতে হবে। সেজন্য কৃষক ও উৎপানকারীকে নিরাপদ বিষমুক্ত শস্যফসল উৎপাদনের জন্য সহযোগিতা করতে হবে। পরবতীতে খাদ্য পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মজুদতকরণ, পরিবেশন সকল ক্ষেত্রে ইফতারসহ খাদ্য নিরাপদ হতে হবে। করোনার সময় ইফতার তৈরি ও বিক্রিতে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। আলোচনা সভা থেকে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে শুধু নয় বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্যে ভেজাল ও আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে খাদ্যকে নিরাপদ রাখার লড়াই আজ বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ খাদ্য ভেজাল ও বিষক্রিয়া রোধ করা। একইভাবে এই করোনা মহামারী রোধ করার জন্যও খাদ্য পণ্যের দিকে বিশেষ নজর ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো বিশেষভাবে নগরে আনাও গুরুত্বপূর্ণ।

 

আলোচনা সভা থেকে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা গুলো তুলে ধরা হয়:

 

·         খামার থেকে খাবার বন্টন সকল পর্যায়ে খাদ্যকে নিরাপদ  করতে হবে। প্রয়োজন  বিদ্যমান আইনের  কঠোর প্রয়োগ।

·         করোনা মহামারির যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইফতার সামগ্রীর বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, তা না হলে আরো বেশি মাত্রায় সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

·         খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানোর সাথে জড়িত এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদিযুক্ত ও ভেজাল খাদ্য বিক্রয়কারীদের বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে ও  মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দন্ড প্রদান অব্যাহত রাখা।

·         ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯, নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।

·         ভেজালকারী যেই হোকনা কেন জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আইন প্রয়োগে সরকারের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা যাবেনা।

·         বিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারকে খাদ্যে বিষ ও ভেজাল মিশ্রণের উৎসমূল থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।

·         সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা।

·         গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার- প্রচারণার মাধ্যমে কৃষক, উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের রাসায়নিক দ্রব্যাদি, কীটনাশক, ভেজাল মিশ্রনের ক্ষতিকর দিক এবং আইনে বর্ণিত দন্ড তুলে ধরে সচেতন করা।

·         পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআর কর্তৃক বন্দরসমূহে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করা।