নারায়ণগঞ্জে সেজান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিক হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত,দায়ীদের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছে পবা
নারায়ণগঞ্জে সেজান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিক হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত,দায়ীদের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছে পবা
 
করোনাভাইরাস মহামারীতে সারাদেশে কঠোর লকডাউন অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। প্রথমেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে চেয়ারম্যান-এমডিসহ আট জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
 
সেজান জুস কারখানার সিঁড়ি বন্ধ থাকায় নারী ও শিশু শ্রমিক সহ অনেকের লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। সেজান জুস কারখানাটি মূলত শিশু শ্রমিকদের অল্প বেতন দিয়ে এখানে খাটানো হতো। তাদের কয়েক মাসের বেতনও বকেয়া ছিল। দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম যেখানে নিষিদ্ধ সেখানে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের এনে এখানে অল্প বেতনে কাজ করানো হতো। শুরুর দিকে এরা হাতের কাজ করলেও ছয়মাস পর বেতন সামান্য বৃদ্ধি করে বিভিন্ন পণ্য তৈরির মেশিনের সহকারি হিসেবে কাজ করানো হতো তাদের দিয়ে ; যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেআইনি।
 
রানা প্লাজা, তাজরীন, ট্রাম্পাকো সহ এ ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঘটনা আমাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। শ্রমিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সকল কারখানায় নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম আইনে নিহত ও আহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের জন্য যে অপর্যাপ্ত অর্থের কথা উল্লেখ আছে তা অতি জরুরী পর্যালোচনা করে একটি সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ণয়ের জন্য সংশোধন হওয়া প্রয়োজন।
 
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধ্বসে যে নীতিমালার ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ধার্য করা হয়েছে তা আমাদের আইন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অনুসরণ করা উচিত। পাশাপাশি এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রকাশ করা প্রয়োজন। এই লকডাউন অবস্থায় শ্রমিকের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র ও সুরক্ষার প্রতি যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ তদারকি করেন আমরা তার জোর দাবি জানাচ্ছি।
 
সেজান জুস মূলতঃ আমের জুস। সংগত কারণেই সেখানে আমের ভর মৌসুমে শত শত টন আম ও পাল্পের মজুদ থাকার কথা। অথচ এ ‘জুস’ তৈরিতে কোনো আম বা আমের নির্যাস ব্যবহার করার নজির ছিল না। সেজান জুস একটি জনপ্রিয় ও উন্নতমানের ব্র‍্যান্ডের কথা বলে লাখ লাখ ভোক্তাকে আমের জুসের নামে কেমিকেল খাওয়ানো হচ্ছে। এই কেমিকেল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকি স্বরুপ- যা একটি নীরব গণহত্যার সামিলও বটে। আমরা এই বিষয়ে একটি সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
 
আমরা কোনো কারখানা বন্ধের পক্ষে নই; আমরা চাই প্রতিটি কারখানায় সুরক্ষা সরঞ্জাম, শ্রমিক ও জন নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার নিশ্চয়তা। ভবিষ্যতে যেন এ ধরণের দূর্ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য বিল্ডিং কোড,পরিবেশ, শ্রম বিধি সহ প্রয়োজনীয় সকল নীতিমালা অনুসরণ করে যেনো কারখানাগুলো তৈরি হয়। সে মোতাবেক নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটে, সেজন্য আইন ও বিধিমালা অনুসারে ফায়ার সার্ভিস, বিএসটিআই, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা যাতে নিয়মিত তদারকি করে এবং দ্রুততার সাথে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করে। পাশাপাশি এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তাও নিয়মিত হয়রানি বিহীন তদারকি করতে হবে।
 
পরিশেষে, আমরা এ ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেআইনি কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার এবং শাস্তি দাবি করছি। পাশাপাশি আমরা নিহত ও আহত সহ ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি।