সাইক্লিং প্রসারে প্রয়োজন বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার পর্যালোচনা ও আধুনিকায়ন
বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত বাহন দুই চাকার সাইকেল চলাচলের সাথে সম্পর্কিত অনেক নীতিমালা আছে, আছে অনেক আইন। সেসব আইন ও নীতিমালায় এমন কিছু উপাদান বিদ্যমান আছে, যা কিনা সাইক্লিং এর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ কিংবা নিরুৎসাহিত করে/করতে পারে। তাই, সাইক্লিং এর অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান ও গতিশীল করার জন্য সে ধরনের উপাদানগুলোকে চিহ্নিত করে আইন ও নীতিমালা সংশোধন করা প্রয়োজন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন(পবা) এর উদ্যোগে আজ ২ অক্টোবর ২০২১, সকাল ১০ঃ৩০ টায় "সাইক্লিং প্রসারে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার পর্যালোচনা ও আধুনিকায়ন" শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী এর সভাপতিত্বে এবং পবার সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ এর সঞ্চালনায়, অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। আরো বক্তব্য রাখেন আইনজীবি ও পবা’র সম্পাদক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, বিডি ক্লিক এর সাধারন সম্পাদক আরিফ আহমেদ, গবেষক ও স্থপতি জাকারিয়া ইবনে রাজ্জাক রাসেল, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকতা সামিউল হাসান সজিব, গ্রিণফোর্স এর সমন্বয়ক মেসবাহ সুমন, বিডি ট্যুারিস্ট সাইক্লিং এর সমন্বয়ক রোজিনা আক্তার প্রমুখ।
গাউস পিয়ারী বলেন, সাইকেল হলো পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী এবং অল্প জায়গায় রাখা যায় এমন একটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূণ বাহন। সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে সাইক্লিং এর উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়, তাহলে এর গুরুত্ব আরো বাড়বে। সাইকেল রুট/ নেটওয়ার্ক নিরাপদ ও নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে সাইকেল চালানোয় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে সাইকেল এর ক্ষেত্রে। সাইকেল চালানোর সুবিধার ব্যাপারে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিষয়ে বিবেচনায় আনা সম্ভব হলে স্বাস্থ্যখাতের ভতুর্কি পরিমাণ কমে আসবে।
আইনজীবি সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, হাঁটা ও সাইক্লিংয়ের মতো শরীর চর্চার সুবিধা নিশ্চিতে স্থানীয় সরকারের মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা দরকার।
গবেষক ও স্থপতি জাকারিয়া ইবনে রাজ্জাক রাসেল বলেন, সাইকেল চলাচলে নীতিমালা ও ও আইন আছে। কিন্তু সেটা যদি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে সেই আইন ও নীতিমালা বাস্তবে কোন কাজে আসে না। এজন্য প্রয়োজনে আইন ও নীতিমালা সংশোধন করতে হবে এবং যথাযথভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিডি ক্লিক এর সাধারন সম্পাদক আরিফ আহমেদ বলেন, হাইওয়েতে সাইকেল লেনের বাস্তবায়ন করতে হবে। সাইকেল চলাচলে আইনগুলো যেন সময়োপযোগী হয় সেই বিষয়ে জোর দিতে হবে।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকতা সামিউল হাসান সজিব বলেন,সঠিক জায়গায় রুট নির্ধারণ করতে না পারায় সাইকেল লেনগুলো দখল হয়ে আছে। তাই সাইকেল লেন গুলোকে কোন বাস্তবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এই সব ত্রুটির সংশোধন হবার দরকার।
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, আমাদের সামগ্রীক ইকো সিস্টেম বজায় রাখতে আইন ও নীতিমালা খুবই গুরুত্বর্পূণ। শুধুমাত্র ব্যায়াম বা ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়,প্রাত্যহিক কাজ-কর্ম করার জন্য সাইকেলের ব্যবহারকে জনপ্রিয় ও সহজ করতে হবে। অফিস, আদালত, মার্কেটে চলাচলে সাইকেল বান্ধব করতে সাইকেল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পোশাক পরিবর্তন করার সুযোগ রাখতে হবে। উচ্চপদস্থ কর্মকতার বাহিরে অফিসের কাজে গাড়ির পরিবর্তে সাইকেল ব্যবহার করার সুবিধা সম্বলিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
সুপারিশসমূহঃ
১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত যাতায়াতের জন্য সাইকেল ব্যবহার করায় উৎসাহিত করতে হবে।
২. বাস্তবায়িত সাইকেল লেনগুলো দখলমুক্ত করে চলাচল উপযোগী করতে হবে।
৩. হাইওয়েতে/প্রয়োজনীয় সকল জায়গায় সাইকেল লেন বাস্তবায়ন করতে হবে
৪. অফিস,আদালত, মার্কেট এবং বিভিন্ন ট্যুরিস্ট প্লেস সাইকেল বান্ধব করতে হবে
৫. সাইকেল চলাচলে/প্রসারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী নীতিমালা/ আইন সংশোধন করতে হবে
৬. সাইক্লিং এর সুবিধাসমুহ প্রচার করে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে