জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ জরুরী
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরী। বিশ^ খাদ্য দিবস উপলক্ষ্যে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন(পবা) ও বারসিক কর্তৃক প্রেসক্লাবে আয়োজিত “জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই দাবী জোরালো ভাবে  তুলে ধরেন।
 
বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ কিন্তু ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যে বাজার সয়লাব। যার ফলে ক্যান্সার, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন দূরারোগ্য জটিল রোগের প্রার্দুভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই সব রোগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারন বিষাক্ত খাদ্য। স াম্প্রতিক সময়ে সরকার খাদ্যের বিষাক্ততা ও ভেজাল দুর করার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। কৃষি খাদ্য বিশেষ করে শাক-সব্জি, ফলমুল, মাছ-মাংস উৎপাদনে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত কেমিকেল বিশেষ করে হারবিসাইড, কীটনাশক, পেস্টিসাইড, হরমোন ও অনিয়ন্ত্রিত এন্টিবায়টিক ব্যবহার হচ্ছে।
 
সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কৃষক ও উদ্যোক্তা মান সম্মত পণ্য উৎপাদন করলেও সরকার কর্তৃক সকল পর্যায়ে যথাযথ তদারকির অভাবে ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করতে পারছেনা এবং উদ্যোক্তারা ভালো মূল্য পাচ্ছেনা। কৃষি পণ্যের টেস্টিং ল্যাব চালু না হওয়ায় ব্যপক সম্ভাবনাময় রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছেনা। মান সম্মত কৃষিপন্য উৎপাদন ও সঠিক  তদারকিতে বর্তমানে  কৃষিপন্যে রপ্তানি আয় দেড় বিলিয়ন ডলার থেকে স্বল্প সময়ে ৪-৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নতি করা সম্ভব। 
 
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম, ধারনাপত্র পাঠ করেন বারসিকের সমন্বয়ক মো: জাহাঙ্গীর আলম, আলোচনা করেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, বাংলাদেশ স্কাউটস জাতীয় কমিশনার আকতারুজ্জামান খান, নাসফের সাধারণ সম্পাদক মো: তৈয়ব আলী, বারসিকের পরিচালক সৈয়দ আলী বিশ^াস, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুল হক, ডাব্লিউবিবি ট্রস্ট এর প্রোগ্রাম মানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি মো: নাজিমউদ্দিন, বানিপা এর সভাপতি প্রকৌ. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বিডিক্লিক এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো: মুসা, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন এর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো: হাসিবুল হক পুনম, মৃত্তিকা’র প্রোগ্রাম অফিসার খাদিজা খাতুন, বিডিক্লিক এর প্রধান সমন্বয়ক রোজিনা আক্তার, পবা এর সদস্য তোফায়েল আহম্মেদ, বারসিকের গবেষণা সহকারী সাবিনা নাঈম প্রমূখ।
 
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তবে বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাদ্যকে নিরাপদ  রাখার জন্য ভেজাল প্রতিরোধে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। খাদ্যের  মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাব  চালু করতে হবে। কোভিড থাকা সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে এবং পুষ্টির মান বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা পৃথিবীর চেয়ে বাংলাদেশের খাদ্যের  উৎপাদন ভালো। কিন্তু খাদ্য  উৎপাদনের  পরিসংখ্যান একেক অধিদপ্তরে একেক  রকম, এটা সমন্বয়ক করে সঠিক তথ্য  বের করার জানান তিনি। তিনি আরো  বলেন বাজেটের আকার বাড়লেও কৃষি বাজেটের আকার বাড়েনি।  তাই কৃষকদের ভর্তুকী  বাড়াতে হবে।
 
বক্তরা বলেন, প্রতিটি এলাকায় কৃষক ক্লাব তৈরি করে নিরাপদ খাদ্য তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। খাদ্যের সরকারী  উদ্যোগে পরীক্ষা করে তার ফলাফল জনগণকে জানাতে হবে। খাদ্যকে নিরাপদ করতে খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি ও খাদ্যের উৎস স্থলকেই প্রথমত নিরাপদ করাটা জরুরি। তারপর থাকছে খাদ্য সরবরাহ, পরিবহন, বিপণন, মজুতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবেশন। জমির মাটি থেকে খাবার থালা অবধি খাদ্য নিরাপদ হওয়া জরুরি। আমরা যেমন চাই নিরাপদ ভাবে খাবার উৎপাদন হোক, আবার ফরমালিন-কার্বাইড বা ক্ষতিকর কোনো উপাদান খাবারে মিশে থাকুক তাও চাইনা। 
 
প্রতিদিন দেশে কমছে কৃষিজমি এবং প্রাকৃতিক পানির উৎসস্থল। অধিক খাদ্য ফলানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। এরপর খাদ্য বিপণনের নানা স্তরে ক্ষতিকর রাসায়নিকের মিশ্রণ তো থাকছেই। ক্ষতিকর কীটনাশক, আগাছানাশক, ছত্রাকনাশক মাটির অণুজীব থেকে শুরু করে শামুক-কেঁচো-উপকারী পতঙ্গ সব মারা পড়ছে। এত দূষিত হচ্ছে সামগ্রিক পরিবেশ। মানবস্বাস্থ্য ক্রমেই হুমকীর মুখে পড়ছে। প্রতিবছর লিচু মৌসুমে বিশেষত দিনাজপুর অঞ্চলে বিষমাখা লিচু খেয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শস্যক্ষেতে বিষ ছিটানোর পর গ্রামবাসীর হাঁস-মুরগী  মরছে এবং এ নিয়ে গ্রামে প্রতিবেশীর সাথে নানা দরবার লেগেই আছে। জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে তার অবশেষ জমা হচ্ছে জলাশয়ে। এভাবে মরছে দেশি মাছের বৈচিত্র্য। পাশাপাশি জলজ জীব ও জলচর পাখিদের জন্যও এটি খাদ্যসংকট তৈরি করছে।
 
বেশিদিন খাদ্য তাজা রাখা, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, কাঁচা ফলকে দ্রুতবাজারজাতকরণের জন্য পাকিয়ে তোলা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে  ফল ও শাকসবজির সঙ্গে আজকাল অবাধে প্রয়োগ করা হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য। যেমন কুমড়ার সঙ্গে মেশানো হচ্ছে সোডিয়াম সাইক্লোমেট, কাপড়ের বিষাক্ত রং, সাইট্রিক এসিড ও প্রিজারভেটিভ। বিস্কুট, চানাচুরসহ বেকারির মিষ্টিজাতীয় খাবারে মেশানো হচ্ছে কাপড়ের রংসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য। যেমন- টোস্ট বিস্কুটে গ্লুু¬ুটামেট, চানাচুরে মবিল, জিলাপিতে হাইড্রোজ, মুড়িতে হাইড্রোজ ও ইউরিয়া। তা ছাড়া খাদ্যসামগ্রী গুদামজাত করতে গিয়ে কীটনাশকে অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়- যেমন শুঁটকিমাছ প্রক্রিয়াজাত ও গুদামজাত করতে ডিডিটি ও অন্যান্য কীটনাশক।
 
খাদ্যে দূষণের কারণ বহুমাত্রিক। শুধু চাষাবাদের মাধ্যমেই নয়, অন্যভাবে খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়েও তৈরি হচ্ছে নানা ধরণের দূষণ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখতে পেয়েছে, অপরিশোধিত পোল্ট্রি বর্জ্য সরাসরি জমিতে ও জলাধারে ব্যবহারের কারণে শাক-সব্জিতে ঢুকে পড়ছে রোগজীবাণু। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের গবেষকরা গাজর, করলা, বেগুন, লাউ, শসা, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, মরিচ ও ঝিঙ্গায় সালমোনেলা ও ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া সনাক্ত করেছেন যা টাইফয়েড ও ডায়রিয়া রোগের জন্য দায়ী (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ৭ অক্টোবর ২০১৭)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ ২০১৪ সনে পোল্ট্রি মুরগির মগজে ৭৯৯ পিপিএম, মাংসে ৩৪৪ পিপিএম, চামড়ায় ৫৫৭ পিপিএম, কলিজায় ৫৭০ পিপিএম এবং হাড়ে ১৯৯০ পিপিএম ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি  দেখতে পান। (সূত্র: ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সিভিল, স্ট্রাকচারাল, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট, আগস্ট ২০১৪)। মানবদেহে এই ভারী ধাতু ক্রোমিয়ামের সহনীয় মাত্রা হলো প্রতিদিন ২৫ পিপিএম। একই সনের নভেম্বরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পুষ্টি ইউনিট মাছের জন্য তৈরি খাদ্য নিয়ে একটি গবেষণা করে দেখেছে, প্রতি কেজি মাছের খাবারে ৪৯৭১.১৫ পিপিএম এবং মুরগির খাবারে ৪,২০৫.৭০ পিপিএম ক্রোমিয়াম আছে (সূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪)।  আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপে নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি বুলেটিনে দেখানো হয়েছে যে, দেশের ভোগ্য পণ্যের প্রায় ৪৮ শতাংশই ভেজাল। ১০ বছর আগেও এ দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ছিল ৮০ লাখ, বর্তমানে সেটি দাঁড়িয়েছে দুই কোটিরও বেশিতে; যার অর্ধেকই শিশু। দেশে প্রতিবছর ৮৪ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। ১৯৯২-৯৩ সালে এ দেশে পরিচালিত একটা সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশের পুকুর ও জলাশয়ের পানিতে বিষাক্ত কীটনাশক ডাইএল্ড্রিনের মাত্রা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি (জাহান খুরশীদ, ২০১১)।
 
আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল রোধে প্রথম ‘বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ’ পাস হয় ১৯৫৯ সালে। ১৯৫৯ সালের বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ বাতিল করে নাগরিকের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির আধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এই আইনের আওতায় বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে উৎপাদন আমদানি, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মজুদ,সরবাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান এবং নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে  ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হয়। নিরাপদ খাদ্যআইন ২০১৩ যার ৫৮ ধারায়  মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য, কীটনাশক বা বালাই নাশক অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে। নতুন এ আইনে খাদ্য প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য খাদ্যকে অনিরাপদ করার দায়ে অর্থদন্ড বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড নির্দিষ্ট শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে আমলযোগ্যতা ও বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। বিষাক্ত খাদ্যের ভয়াবহতা বিবেচনায় বর্তমান সরকার ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫, নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করেছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় সংসদ কর্তৃক সুনিদিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার যথাযথ উদ্যোগ ও অঙ্গীকারের অভাব, বিষাক্ত খাদ্যের ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনুধাবনে উদাসীনতার ফলে আমরা জনগণ এর কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছি না। সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কর্তৃক এসব আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা যেতে  পারে। অন্যথায় বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে ধীরে ধীরে আমরা পংঙ্গু জাতিতে পরিণত হব। 
 
বাংলাদেশ আয়তনে ছোট ও দুর্যোগপূর্ণ দেশ হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বর্তমানে ধান, মাছ ও সবজি উৎপাদনে এগিয়ে চলেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে বিগত চার বছরে বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরে সেটা ছয় গুণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন এই খাতের ব্যবসায়ী ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি হতো মাত্র ৫৫ কোটি ডলারের। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে ১০৩ কোটি ডলার আয় হয়েছে। পরিতাপের বিষয় বিশ্বমানের কৃষিপণ্য উৎপাদনে ফাইটোস্যানিটারি (উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত) সনদ ও গুড অ্যাগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (গ্যাপ) নিশ্চিত করে পণ্য তৈরি করতে না পারায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন রাশিয়ায় আলু রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি ফিজির একদল বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে সফর করে আলুর প্রতি আগ্রহী হলেও তাদের ফাইটোস্যানিটারি শর্তাদি পূরণ করতে না পারায় আলু রপ্তানির সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। উৎপাদিত কৃষিপণ্যে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের বিষক্রিয়া পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। দেশে বিশ্বমানের ল্যাবরেটরি স্থাপন ও রপ্তানিতে শুল্ক-অশুল্ক বাধাকে অতিক্রম করতে পারলে তৈরি পোশাক শিল্পের পর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় রপ্তানির খাত হিসেবে কৃষি পণ্য রপ্তানি খাতটি উঠে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। 
 
করণীয়সমূহ:
১. খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানোর সাথে জড়িত এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদিযুক্ত ও ভেজাল খাদ্য বিক্রয়কারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দন্ড প্রদান অব্যাহত রাখা।  
২. ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯, নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। 
৩. জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্যে বিষ বা ভেজালরোধে কোন রকম বৈষম্য বা রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই আইন প্রয়োগে সরকারের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪. বিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারকে খাদ্যে বিষ ও ভেজাল মিশ্রণের উৎসমূল থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
৫. সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী এবং লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬. সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা। 
৭. গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে কৃষক, উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের রাসায়নিক দ্রব্যাদি, কীটনাশক, ভেজাল মিশ্রণের ক্ষতিকর দিক এবং আইনে বর্ণিত দন্ড তুলে ধরে সচেতন করা। 
৮. পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআর কর্তৃক বন্দরসমূহে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করা। 
৯. খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা।
১০. বিষযুক্ত খাদ্যের ভয়াবহ বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশে জৈব কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন ও একে জনপ্রিয় করে তোলা।
১১. ২০১৯ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রন ল্যাবটি দ্রুত কৃষকদের জন্য চালু করতে হবে যাতে আমাদের দেশের যুব কৃণকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের মান ঠিক রেখে দেশে এবং দেশের বাইরে রপ্তাানী করতে পারে।