বাসভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও যাত্রী হয়রানি বন্ধ করতে-পর্যাপ্ত বাস নিশ্চিত করা ও চক্রান্তকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই
কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ও বাসায় ফেরার সময় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বাসে উঠতে পারা এখন সৌভাগ্যের বিষয়। সেই সাথে বসার সীট পেলে তো ভাগ্যবান। গেট লক বা সিটিং সার্ভিসের নামে ভাড়া বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে বাস ভাড়া প্রায়ই বৃদ্ধি হয়। বাসের এ সংকট ইচ্ছাকৃত। পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস কোন রুটেই নামানো হয়না। পরিকল্পিতভাবে কৃত্তিম সংকট তৈরি আছে এবং নানা ভাবে যাত্রী হয়রানী করা হয়। করোনা কালেও প্রায় দ্বিগুন ভাড়া নেওয়ার পরও মানুষ গাদাগাদি করে বাসে চড়তে বাধ্য হয়। গ্যাসের দাম সামান্য বৃদ্ধির সময় একদফা বাস ভাড়া বাড়ে। সম্প্রতি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর আবারও প্রায় দ্বিগুন বৃদ্ধি পায় যদিও সরকারের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থানের পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ভাড়া বৃদ্ধি বা যাত্রী হয়রানীর বিষয়ে মোবাইল কোর্টে জরিমানা করলেই এই রুটে বাস আরো কমে যায়। ফলে যাত্রী দূর্ভোগ লাঘব হয়না। একটি চক্র ইচ্ছাকৃত ভাবেই বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করেনা বা অন্য কেউ করতে চাইলে তাতে বাঁধা দেয়। পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস রাস্তায় চলাচল নিশ্চিত করা হলে,  বাস ভাড়া নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে এবং যাত্রী হয়রানী কমে যাবে। তাই আজ ২০ নভেম্বর ২০২১, শনিবার, সকাল ১১ টায়, জাতীয় জাদুঘরের সামনে “বাসভাড়া নয়িন্ত্রণ ও যাত্রী হয়রানী বন্ধ করতÑেপর্যাপ্ত বাস নিশ্চিত করা ও চক্রান্তকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই” শীর্ষক মানববন্ধন করা হয় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাসফ সহ ১৯ টি সংগঠনের যোৗথ উদ্যোগে। 
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান -এর সভাপতিত্বে ও পবা’র সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ এর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, নাসফ-এর সাধারণ সম্পাদক মো: তৈয়ব আলী, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ এর সভাপতি নাজিমউদ্দীন, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি এর সাধারণ সম্পাদক মেনন চৌধুরী, আইনের পাঠশালা এর সভাপতি সুব্রত কুমার দাস,  বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন এর  প্রচার ও গবেষণা সম্পাদক হাসিবুল হক পুনম, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যান সংসদ এর সভাপতি মো: মুসা, নাসফের শাকিল রেহমান, পবা’র সদস্য সুমন হাওলাদার প্রমুখ।
 
জ্বালানি বা গ্যাসের দাম সরকার বাড়ায়, আবার এর সঙ্গে মিলিয়ে বাস ও যানবাহনের ভাড়াও সরকারই বাড়ায় বা ঠিক করে দেয়। কিন্তু একটি ঠিক থাকে, অন্যটি থাকে না। সরকার-নির্ধারিত দামেই গ্যাস বা জ্বালানি বিক্রি হয়, কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ের সময় কিছুই নির্ধারিত থাকে না। পরিবহন শ্রমিক নামধারী একটি চক্র পুরো পরিবহন সেক্টরকে জিম্মি করে রেখেছে। সংস্থার নিজস্ব লোকবলের মাধ্যমে বিআরটিসি বাস পরিচালনায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও সিন্ডিকেটের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ বিরাজমান। এমনকি এই সিন্ডিকেট হাইকোর্টের রুলকেও পরোয়া করেনা। পরিবহন যারা চালান, দাম বাড়ানোর বেলায় সরকারের হয়ে তারাই আবার দরকষাকষি করেন। অন্তত টেবিলের উভয় পক্ষে বসেন একই স্বার্থের লোক। ফলে ভাড়া আদায়টা তাঁদের জোর জুলুমের বিষয়। যেকোনো রুটে নির্দিষ্ট দূরত্বগুলোতে একটি ভাড়া একবার কায়েম করে ফেললেই হলো। এরপর থেকে সেটাই নিয়ম, সেটাই নির্ধারিত ভাড়া। এর সঙ্গে সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার কোনো সম্পর্ক থাকে না।
 
বর্তমানে রাজধানীতে সচল থাকা বিআরটিসি'র প্রায় অর্ধেক বাস ব্যবহৃত হয় ‘স্টাফ বাস’ হিসেবে। মুনাফা বেশি পেতেই স্টাফ বাস হিসেবে লীজ দেন তারা। আর এতে বঞ্চিত হতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সরকারি অফিসের স্টাফদের পরিবহনে ব্যবহৃত হয় অনেক সংখ্যাক বাস। ফলে সাধারণ যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য থাকে সামান্য কটি মাত্র। বিভিন্ন রুটে বাস মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থার বাস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া রয়েছে বাসের সংকট।
 
পরিবহন সিন্ডিকেটের জিম্মায় চলে যাচ্ছে কোম্পানিগুলোর বাস। যে কারণে যাত্রীদের সঠিক সেবা তারা প্রদান করতে পারছে না। কোম্পানিগুলোর যেখানে ৫০টি বাস চালানোর কথা সেখানে তারা চালাচ্ছে মাত্র ১০টি। কম বাস চালানোর কারণে যাত্রীদের গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। মানের দিক থেকেও বাসগুলি অনেক নিম্নমানের ও ঝুঁকিপূর্ণ। যানজটেও নাকাল সবাই। সাধারণ মানুষ যারা নিয়মিত বাসে চলাচল করে তাদের হয়রানি ও দুর্ভোগ এখন চরমে পৌঁছেছে।
 
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে বাসের সংখ্যা কমিয়ে সংকট আরো বৃদ্ধি করে। পিক আওয়ারে বা বৃষ্টির সময় যাত্রীদুর্ভোগ আরো তীব্র আকার ধারণ করে। এ সময় কোম্পানিগুলো সুযোগ কাজে লাগিয়ে নানা অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রী হয়রানি বৃদ্ধি করে।  
 
বশ্বিরে উন্নত দশেগুলো যখন গণপরবিহনে বাসকে প্রাধান্য দয়িে ব্যক্তগিত গাড়ি ব্যবহারে নরিুৎসাহতি করছ,ে সখোনে বাংলাদশেরে রাজধানী ঢাকায় ঘটছে উল্টো ঘটনা। ঢাকার রাস্তায় দনিকে দনি ব্যক্তগিত গাড়রি সংখ্যা দ্রুত গততিে বাড়লওে সইে অনুপাতে বাড়ছে না গণপরবিহনরে সংখ্যা। এক সমীক্ষায় উঠে এসছে,ে ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তগিত গাড়রি মধ্যে মােটরসাইকলে ও প্রাইভটেকার যথাক্রমে ৪৯ ও ১৮ শতাংশ বাড়লওে গণপরবিহন বড়েছেে মাত্র ২ শতাংশ।
 
২০২১ সালরে ৩১ আগস্ট র্পযন্ত রাজধানীতে নবিন্ধতি গাড়রি সংখ্যা ১৭ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪ট।ি এর মধ্যে মোটরসাইকলে নবিন্ধতি হয়ছেে সবচয়েে বশেি আট লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৫ট,ি যা মোট গাড়রি ৪৯ শতাংশ। প্রাইভটেকার নবিন্ধতি হয়ছেে তনি লাখ ৮ হাজার ৮৬০ট,ি যা মোট গাড়রি ১৮ শতাংশ। আর বাসরে সংখ্যা ৩৬ হাজার ৯৭৮ট,ি যা মোট গাড়রি ২ শতাংশ। এই চত্রিই বলে দচ্ছি,ে রাজধানীর সড়কে অন্যান্য যানবাহনরে তুলনায় গণপরবিহন তমেন বাড়ছে না। বসেরকারি বভিন্নি সংস্থার সমীক্ষা বলছ,ে পর্যাপ্ত মানসম্মত বড় বাসের অভাবে ঢাকায়  গাড়রি সংখ্যা বড়েে যাওয়ায় দনিকে দনি যানজট তীব্র হচ্ছ।ে কয়কেটি সংস্থার তথ্য মত,ে এই র্দীঘ যানজটে গড়ে দনিে ৩২ লাখ র্কমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছ।ে আর বছরে যানজটে ক্ষতরি পরমিাণ ১ লাখ হাজার কোটি টাকা।
 
 
সুপারিশসমূহঃ
 
১. পর্যাপ্ত সংখ্যক, মানসম্মত বাস নিশ্চিত করতে হবে- যাতে সব রুটে সব সময় পর্যাপ্ত সংখ্যাক বাস রাস্তায়  চলাচল করে।
২. বি আর টিসির অধিকাংশ বাস ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দেওয়া আছে। এই লিজ প্রথা বাতিল  করে দুর্নীতিমুক্ত নিজস্ব উন্নত ব্যবস্থাপনায় গনপরিবহন হিসাবে চালানোর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। 
৩. সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারেÑ তা নিশ্চিত করা এবং যেকোন অজুহাতে অতিরিক্ত বাস ভাড়া বৃদ্ধি প্রতিহত করতে হবে।
৪. হাইকোর্টের রায়, বিদ্যামান আইন ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে যারা নানা অজুহাতে বাস চালনা বন্ধ, যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ পরিবহন খাতে নৈরাজ্য ও জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করছে-এমন চক্রান্তকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
৫. শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ায় চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। 
৬. সব বাসে দৃশ্যমান বিভিন্ন স্থানে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা থাকতে হবে। পাশাপাশি টিকেট সিস্টেম চালু রাখতে হবে।