যানজট নিরসনে সব রুটে পর্যাপ্ত বড় বড় বাস নিশ্চিত কর ও নিয়ন্ত্রণ কর প্রাইভেট কার

সব রুটে পর্যাপ্ত সংখ্যক, মানসম্মত বাস নিশ্চিত করতে হবে-যাতে সব রুটে সব সময় বড় বড় বাস রাস্তায়  চলাচল করে। যাতাযাত সংশ্লিষ্ট সকল নীতি নির্ধারক, কনসালটেন্ট  এবং কর্মকর্তাদের গণপরিবহনে চলাচল বাধ্যতামূলক করা। বি আর টিসির অধিকাংশ বাস ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দেওয়া আছে। এই লিজ প্রথা বাতিল করে দুর্নীতিমুক্ত নিজস্ব উন্নত ব্যবস্থাপনায় গনপরিবহন হিসাবে চালানোর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। প্রাইভেট কারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান-এর সভাপতিত্বে,পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন(পবা) সহ ১২ টি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আজ ২০ ডিসেম্বর ২০২১, সোমবার, সকাল ১১ টায়, জাতীয় জাদুঘরের সামনে “যানজট নিরসনে সব রুটে পর্যাপ্ত বড় বড় বাস নিশ্চিত কর ও নিয়ন্ত্রণ কর প্রাইভেট কার” শীর্ষক মানববন্ধনে উপরোক্ত দাবীগুলো করা হয়।

উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) এর সাধারণ সম্পাদক মো: তৈয়ব আলী, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ’র সভাপতি নাজিমউদ্দীন, জাতীয় সচতেন ফাউন্ডশেন (জাসফা) এর প্রধান সমন্বয়ক মনিরুল ইসলাম মনির, বাংলাদশে ট্যুরিস্ট সাইক্লস্টি এর প্রধান সমন্বয়ক রোজিনা আক্তার, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন এর  প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসিবুল হক পুনম, ঢাকা যুব ফাউন্ডশেন এর মুখপাত্র মো: ইমরান হোসাইন, আলোকিত বন্ধু সংঘ এর সাধারণ সম্পাদক মো: রনি, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যান সংসদ এর সভাপতি মো: মুসা, পরিস্কার ঢাকা এর সমন্বয়ক মো: শাজাহান, বাংলাদশে নিরাপদ পানি আন্দোলনের সভাপতি প্রকৌ: মো: আনোয়ার হোসেন, মৃত্তিকার সমন্বয়ক মুজাহিদ হাসান, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় কমিটি’র সম্পাদক শাকিল রেহমান, নাসফ’র ক্যামেলিয়া চৌধুরী প্রমুখ।

ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ প্রাইভেট কার কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। কারণ রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ীতে চলাচলকারী ৫ শতাংশ বাসিন্দার জন্য সড়কের ৭০ শতাংশ জায়গা দখল হয়ে যায়। তাতে করে সৃষ্ট যানজটে রাজধানীতে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ১শ কোটি টাকা। এর মধ্যেই দিনে নগরীর রাস্তায় নামছে প্রায় ২শ নতুন পরিবহন যা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার জন্য। কোন রুটেই পর্যাপ্ত বাস থাকে না। ফলে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে বাসে উঠতে বাধ্য হয়। অনেক সময় দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে  থাকার পরেও বাসে উঠা যায় না যার কারনে বাধ্য হয়ে অনেকে ছোট ছোট যানবাহনে  যাতাযাত করে। অনেকে দূর্ঘটনা এড়াতে বাসে ওঠার ঝুঁকি নিতে চায়না বলে ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। যার ফলে প্রাইভেট কার,মোটর সাইকেল, সিএনজি ইত্যাদির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে । রাজধানী ঢাকাকে সবার জন্য বসবাসের উপযোগী করতে যানজট নিরসনে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ ও সব রুটে পর্যাপ্ত বড় বড় বাস নিশ্চিতসহ সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা জরুরি। কারণ দুটি প্রাইভেট কারে দুজন যাত্রী সড়কের যে জায়গা দখল করেন, সেই একই জায়গায় গণপরিবহনের একটি বাস অর্ধশতাধিক যাত্রী বহন করতে পারে। 

কর্মস্থলে পৌছার জন্য দুর্ভোগ হ্রাস করতে প্রাইভেট কার কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা কমিয়ে আনতে হবে।যানজট প্রকট আকার ধারন করেছে। সড়কে কোনরকমে চলার উপযোগী পরিবেশ নেই। কোথাও যাওয়া মানেই দুর্ভোগ। অফিসে সময়মতো যাওয়া রীতিমতো বিড়ম্বনা। যানজটের কারনে নগরী এখন চলাচলের অনুপযোগী। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে বিশ্বব্যাংক একটি গবেষণা প্রকাশ করেছিল। গবেষণায় বিশ্বব্যাংক বলছে যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ঢাকায় গাড়ির গতি ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার । বিশ্বব্যাংক এর মতে, এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ। 

যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। ছোট ছোট যানবাহনের পরিমাণ যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম। 

যাতাযাত সংশ্লিষ্ট সকল নীতি নির্ধারক কনসালটেন্ট এবং কর্মকর্তাদের গণপরিবহনে চলাচল বাধ্যতামূলক  করলে তারা বুঝতে পারবে সাধারণ জনগণ কতটা ঝুঁকি নিয়ে গণপরিবহনে যাতায়াত করে সময় ব্যয় করে এবং কি ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করে যাতায়াত করেন। এই পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারলে তারা হয়তো দ্রুত যানজট নিরসনের ব্যবস্থা করতে এগিয়ে আসবেন।

বি আর টিসির অধিকাংশ বাস ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দেওয়া আছে। এই লিজ প্রথা বাতিল করে দুর্নীতিমুক্ত নিজস্ব উন্নত ব্যবস্থাপনায় গনপরিবহন হিসাবে চালানোর ব্যবস্থা গ্রহন করলে রাস্তায় বাসের সংখ্যা সাধারন যাত্রীদের জন্য বৃদ্ধি পাবে। বিভিন্ন রুটে বাস মালিক-শ্রমিকদের  সিন্ডিকেটের বাধার মুখে পড়ে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থার বাস বন্ধ করে না দিতে পারে তার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকার যানজটের আরো একটি বড় কারণ ব্যক্তিগত গাড়ীর আধিক্য । স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান বা এসটিপি-র হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় কম-বেশি ১৫ ভাগ যাত্রী প্রাইভেট গাড়িতে যাতায়াত করেন। এই ১৫ ভাগ যাত্রীর  দখলে রয়েছে মোট সড়কের ৭০ ভাগ। বাকি ৮৫ ভাগ যাত্রী অন্য কোনো ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করেন ৷ অর্থাৎ ৮৫ ভাগ যাত্রী সড়কের মাত্র ৩০ ভাগ এলাকা ব্যবহার করেন ৷ তাই ঢাকা শহরের যানজট নিয়ন্ত্রনে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ন্ত্রন করতে হবে। বাড়াতে হবে বাসের সংখ্যা এবং প্রতিটি রুটে পর্যাপ্ত পরিমাণ বড় বড় বাস নিশ্চিত করতে হবে। আর এই উদ্যোগ ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে।

এছাড়াও সমাবেশ থেকে বক্তরা অন্যান্য দাবী তুলে ধরেন- সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সঠিক ভাবে বাস রুট বরাদ্দ দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে বাস রুটের সংখ্যা না কমিয়ে বরং বাড়াতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসম্মত বাসের চলাচল। গাড়ির চালককে ট্রাফিক আইন  মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করা ও গাড়ি ঘোরানো থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা দরকার। ছোট ছোট যানবাহনের সংখ্যা সীমিত করে সব রুটে দোতলা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে। অবৈধ দখলদারির হাত থেকে রাস্তাকে মুক্ত করতে হবে এবং রাস্তায় দোকানপাট বসানো নিষিদ্ধ করতে হবে।