এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ড ও হতাহতের ঘটনায় গঠিত নাগরিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ দায়ীব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নৌব্যবস্থাপনার অনিয়ম দূর কর
 
 
 এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ড ও হতাহতের ঘটনায় দায়ীব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও মৃতব্যক্তির পরিবারকে ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশির নৌব্যবস্থাপনার অনিয়ম দূর করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানান নাগরিক তদন্ত কমিটির আহŸায়ক ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। তিনি আরো বলেন, নাগরিক তদন্ত কমিটির মূল উদ্দেশ্য কমিটি কর্তৃক দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করন নয় বরং নৌপথ ও নৌযান ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, অসংগতি ও অনিয়ম সমূহ চিহ্নিত করা। যথা নৌযান নির্মাণের পূর্বে ডিজাইন অনুমোদন ও তদানুসারে নৌযান বা জাহাজ নির্মাণ প্রক্রিয়ার বিদ্যমান ব্যাপক দুর্বলতা ও অনিয়ম দূর করা। একই সাথে সরকার যেন অগ্নিকান্ড এবং এর ফলে ব্যাপক প্রাণহানির জন্য দায়ী ব্যক্তি সমূহকে চিহ্নিত করে দ্রæত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়। আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে আজ ২২ জানুয়ারি, শনিবার সকাল ১১ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর-রুনি মিলনায়তনে (দোতলা) “এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ড ও হতাহতের ঘটনায় গঠিত নাগরিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।  
 
কমিটির পক্ষে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এর সাধারন সম্পাদক আশীষ কুমার দে, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন এর সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুল সঞ্চলনায় বক্তব্যে রাখেন সাবেক প্রধান নৌকৌশলী ভি শিপস, গøাসগো, যুক্তরাজ্য নৌপ্রকৌশলী মো. আব্দুল হামিদ, নাগরিক উদ্যোগ’র প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান, নাসফ’র সাধারন সম্পাদক মো: তৈয়ব আলী, নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এর সভাপতি হাজী মো. শাহীদ মিয়া, নাগরিক অধিকার ফোরাম, ডিএনসিসি’র মোস্তফা কামাল আকন্দ, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র এর মহাসচিব মাহবুল হক, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিয় কোর্ট এর ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ প্রমুখ। 
 
নাগরিক তদন্ত কমিটির সুপারিশসমূহঃ
১. এমভি অভিযান-১০ লঞ্চ ট্রাজেডির জন্য শুধু মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারের শাস্তি নয়; দায়ী সকলকেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাবে এবং দুর্ঘটনাও কমবে না। 
২. দুর্ঘটনায় নিহত পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণের আইন প্রণয়ন, টাকার পরিমাণ নির্ধারণ এবং দুর্গটনার জন্য দায়ী (নৌযান মালিক/মাস্টার/ড্রাইভার/সরকারি কর্মকর্তা) ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করতে হবে। 
৩. প্রত্যেক যাত্রীবাহী নৌযানে আনসার/সিকিউরিটি থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। 
৪. যাত্রীবাহী লঞ্চের ইঞ্জিনকক্ষ, প্রবশপথ, মাস্টারব্রিজসহ স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন। 
৫. যেকোনো নৌযানের নকশায় অগ্নি-নিরাপত্তার বিষয়টি যুক্ত, সে অনুযায়ী নকশা অনুমোদন এবং যথাযথভাবে নকশা  অনুকরণ করে নৌযান নির্মাণ করতে হবে। 
৬. নতুন নৌযানে অগ্নি-নিরাপত্তা সঠিক আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে ফায়ার সার্ভিস বিভাগের ছাড়পত্র গ্রহণ এবং ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক প্রতি তিন মাস পরপর তা পরীক্ষা করা। 
৭. চলমান নৌযানগুলো বিশেষ করে লঞ্চ ও অন্যান্য যাত্রীবাহী নৌযানের অগ্নি-প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ক্রতি-বিচ্যুতি আছে কি না, তা আগামী ছয় মাসের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পরীক্ষা করা। 
৮. লঞ্চের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা যাবে না। 
৯. ইঞ্জিনকক্ষের পাশ থেকে খাবারের হোটেল সরিয়ে নিতে হবে এবং ইঞ্জিনকক্ষ ও ক্যান্টিন  (হোটেল) এর আশেপাশে জ¦ালানি তেলসহ কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা। 
১০. নৌযানের ইঞ্জিনকক্ষে আগুন লাগলে তা দ্রæত নেভানোর জন্য স্থায়ী কার্বন-অক্্রাইড সরবরাহ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা। 
১১. নৌযানের সকল সকল কর্মীকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পরিচালনার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক ও বছরে অন্তত একবার মহড়ার ব্যবস্থা করা। 
১২. প্রত্যেক নাবিকের ইউনিফর্ম পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। 
১৩. আইএসও ৫৮(ক) ধারা মোতাবেক যাত্রীবাহী নৌযানের বীমা অথবা নৌ দুর্ঘটনা ট্রাস্ট ফান্ড বাধ্যতামূলক করতে হবে।