“নগর জীববৈচিত্র্য, বর্তমান অবস্থা ও আমাদের করণীয়” শীর্ষক পবার গোলটেবিল বৈঠক
“নগর জীববৈচিত্র্য ঃ বর্তমান অবস্থা ও আমাদের করণীয়” 
শীর্ষক পবার গোলটেবিল বৈঠক
 
মানব জীবন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্র্যর গুরুত্ব অপরিসীম। নগরে জীববৈচিত্র্যের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম কিন্তু ঘনবসতি নগরবাসীর জন্য এর গুরুত্ব অনেক বেশি এবং নগর জীবনের প্রাতিবেশিক প্রয়োজনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা খুবই জরুরী এ অভিমত ব্যক্ত করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞগণ। আজ ১ ডিসেম্বর ২০০৭ ইং শনিবার সকাল ১১:১৫ মিনিট পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে নগর জীববৈচিত্র্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ‘নগর জীববৈচিত্র্য ঃ বর্তমান অবস্থা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক পবা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আবুল বাসার।
দ্রুত নগরায়নের ফলে ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরীতে পুকুর/জলাশয়, খোলা জায়গা ও পার্ক  দ্রুত সংকোচনের সাথে সাথে গাছ-পালা ও পশু পাখিসহ নগর জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন জীববৈচিত্র্য আজ মারাতœক হুমকির সম্মুখীন। নগরে জীববৈচিত্র্য দিন দিন হ্রাস পেতে থাকায় এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ ও পরিবেশবিদগণ ভীষণ উদ্বিগ্ন এবং এখন থেকে সকলের সচেতনতা ও সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত  করেন। 
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জীববৈচিত্র্য হলো-একটা নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে বিভিন্ন নমুনার ও বিভিন্ন সংখ্যার উদ্ভীদ ও প্রাণীর উপস্থিতি এবং একে অপরের সাথে সম্পূর্নভাবে নির্ভরশীল। উন্নয়নের নামে দিন দিন জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এমতবস্থায় জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে না পারলে প্রতিবেশ ও পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। নগরে জীববৈচিত্র্যের ধ্বংসের জন্য উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের সুখ সাচ্ছন্দ্যই বেশি দায়ী। গ্রামে জীববৈচিত্র্য যতটা না ধ্বংস হচ্ছে তার চেয়ে শহরে এর হার অনেকগুণ বেশি। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন-নগরীতে মশক নিধনের নামে ডিডিটি এর মতো মারাত্বক আরো  অনেক ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করছে যা ড্রেনের মাধ্যমে জলাশয় বা নিুাঞ্চলের উদ্ভীদ ও প্রাণী কুলের উপর মারাত্বক প্রভাব পড়ছে। 
এছাড়াও পরিবেশ সহায়ক নয় এমন সব বিদেশী গাছ লাগানো হচ্ছে নগর শোভা বর্ধনের নামে যা গাছের উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন পাখি ও অন্যান্য কীট-পতঙ্গের খাদ্যে ও আবাস্থলের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে। নগর পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে জীব (উদ্ভীদ ও প্রাণী) ও অজীব (আলো, বাতাস ইত্যাদি) উপাদানের মধ্যে সমন্বয় রাখতে হবে কারণ একটি উপাদান আরেকটি উপাদানের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। কোন অবস্থায় মানুষ জৈবিক অবস্থা ব্যপ্ত ঘটাতে পারেনা যদি ঘটে তাহলে জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব টিকে রাখা সম্ভব নয়। নগর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আজকের আলোচকগণ নিুোক্ত বিষয়গুলি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেনঃ
১. জীববৈচিত্র্যের বর্তমান অবস্থা কি তা সনাক্ত করতে হবে;
২. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ধারাবাহিকত রক্ষা করতে ওহভড়ৎসবঃরড়হ পবষষ  গঠন করতে হবে; 
৩. শহর এলাকায় নির্দিষ্ট পরিমান গাছ-পালা থাকতে হবে এবং কোন কোন এলাকায় কোন ধরণের গাছ থাকবে তার সাথে কোন ধরণের প্রাণীর সম্পর্ক রয়েছে সেই বিবেচনায় গাছ লাগাতে হবে;
৪. সমভাবে জলাশয় ও জলাভূমি থাকতে হবে এবং জলাভূমিতে কি কি গাছ থাকবে ও সেখানে কোন কোন প্রাণী কোন স্তরে থাকবে তা সনাক্ত করতে হবে; 
৫. নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে;
৬. শিক্ষা প্রতিষঠানে ছাত্র/ছাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
৭. সচেতনতা বৃদ্ধিতে মিডিয়াকে এ বিষয়ে ইতিবাচক তথ্য সরবরাহ করতে হবে;
 গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠানে আলোচনার সুত্রপাত করেন নগর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিবেদিত শাহনাজ আশরাফী এবং এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পবা’র আহ্বায়ক আবু নাসের খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আকতারুন্নেছা চৌধুরী, নগর জীববৈচিত্র্য টিমের সদস্য সচিব দিনা, মোসাদ্দেক আহমেদ পলাশ, পীস এর মহাসচিব ইফ্মা হোসেন এবং জীববৈচিত্র্য বিষয়ের বিশেষজ্ঞগণসহ পরিবেশবিদ ও পরিবেশবাদীরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।