হাজারো মানুষের সমাবেশে বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে শপথ
হাজারো মানুষের সমাবেশে বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে শপথ
 
আজ ২৪ অক্টোবর ২০০৯ সকাল ১১:০০ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে শুভাঢ্যা খালের মুৃখে (সদরঘাট লঞ্চ ঘাটের উল্টা দিকে, আলম মার্কেটের সামনে শুভাঢ্যা খাল-বুড়িগঙ্গা নদীর মোহনায়) বুড়িগঙ্গা ও শুভাঢ্যা খাল সহ অন্যান্য নদ-নদীগুলো দখল ও দূষণ মুক্ত চাই দাবীতে সমাবেশে, বুড়িগঙ্গা আমার মাÑতাকে হারাতে দেবনা। ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা-আর দিয়োনা হানা। ঢাকাবাসি হও চাঙ্গা-বাঁচাও নদী বৃুড়িগঙ্গা ইত্যাদি শ্লোগান ছিল বুড়িগঙ্গা পাড়ের হাজারো মানুষের কন্ঠে। তাদের কন্ঠে ছিল বুড়িগঙ্গা বাঁচানোর আকুল আবেদন এবং বুড়িগঙ্গার কোল ঘেষে প্রবাহিত শুভাঢ্যা খালের পূণ:দখলকৃত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবী। উক্ত সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সমবেত জনসাধারণ বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে মুষ্টিবদ্ধ শপথ গ্রহণ করে।     
 
পবা’র সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী বলেনÑ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বুড়িগঙ্গা ও শুভাঢ্যা খাল পাড়ের সর্বসাধারণের অকুন্ঠ সমর্থন এবং সহযোগীতার ফলে সরকার কর্তৃক কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শুভাঢ্যা খাল উদ্ধার হয়েছিল। খালটি উদ্ধার হওয়ায় এলাকাবাসী সহ সকলেই আন্তরিকভাবে এ কার্যক্রমের প্রশংসা করেছিল। কিন্তু বর্তমানে আবার দখল প্রক্রিয়ার কবলে পড়েছে এ খালটি। স্বার্থান্বেষী মহল বা ভূমিদস্যুরা ঢাকার নদী, খাল ও জলাধারগুলি বিভিন্ন্ সময়ে নানা কৌশলে দখল ও ভরাট করে চলেছে। উদ্ধার হওয়া শুভাঢ্যা খালের ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গা ভরাট করে পাকাপাকি ভাবে মার্কেট ও ব্যক্তিগত পর্যায়েও বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর কোল ঘেষে শুভাঢ্যা খালের অবস্থান হওয়ায় বুড়িগঙ্গার দখলকারীদের কালো থাবা শুভাঢ্যা খালকেও দ্রুত গ্রাস করে চলেছে। 
 
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেনÑ আমাদের কারোরই অজানা নেই বুড়িগঙ্গা নদীর করুণ অবস্থার চিত্র। অজানা নেই ঢাকার চারপাশের তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী নদীসহ দেশের অন্যান্য নদ-নদীর দখল-দূষণের কাহিনী। শীতের আগমনে নদীর পানি কমে আসছে আর বুড়িগঙ্গা পাড়ের মানুষকে প্রস্তুত হতে হচ্ছে দূর্গন্ধময়, দূষিত বাতাস গ্রহণের অসহনীয় যন্ত্রণার জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল নদী খনন, দখলমুক্ত, দূষণমুক্ত করণের ঘোষণা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর পদক্ষেপ গ্রহণের বাস্তব প্রয়োগ এখনও সীমিত। কিন্তু দখল প্রক্রিয়াতো আর থেমে থাকছেনা। মাঝে মাঝে সরকারীভাবে ঢাকার আশপাশের নদীগুলি মুক্ত করণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। তবে নদী বাঁচানোর উদ্দেশ্যে উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম নদীগুলিকে আরও ধ্বংস করে ফেলছে। কারণ কোন পরিকল্পনা ছাড়াই, সঠিক সরঞ্জামাদিবিহীন অবৈধ স্থাপনাগুলি ভেঙ্গে আবার তা নদীতে ফেলা হচ্ছে। সীমানা নির্ধারণ সঠিকভাবে করা হচ্ছেনা এবং নদীর আসল সীমানা ধরে স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছেনা। এতে যারা নদীর জায়গায় অবৈধ স্থাপনা করেছে তাদেরকে সরকারীভাবে এক প্রকার বৈধতা প্রদান করা হচ্ছে। 
 
এ কারণে (১) বুড়িগঙ্গার পূনঃদখল বন্ধ করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে (২) কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শুভাঢ্যা থালের পূনঃদখলকৃত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালটি পূনঃখনন করতে হবে (৩) বুড়িগঙ্গার সঙ্গে শুভাঢ্যা খালের পানি প্রবাহের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে (৪) বুড়িগঙ্গার তীরে অবৈধ দখল স্থাপনাগুলি চিহ্নিতকরনের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হবে (৫) দেশের নদ-নদী ও খালগুলোর সীমানা চিহ্নিতকরনের মাধ্যমে এগুলো রক্ষনাবেক্ষন ও দূষনমুক্ত করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে দায়বদ্ধ করতে হবে (৬) দখলকৃত খাল ও নদ-নদীগুলো দখলমুক্ত করার ব্যাপারে টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্তগুলো অতিসত্বর বাস্তবায়ন করতে হবে (৭) এ বিষয়ে দায়িত্ব পালনে অনিয়ম ও গাফিলতির জন্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় প্রতিনিধি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
 
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানÑসাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরীÑসহ: সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান সেন্টু, শুভাঢ্যা খাল রক্ষা কমিটি’র সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ অপু, এ লতিফ চেরিটেবল ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক জুয়েল সরদার এবং বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত শিল্পী কদ্দুস বয়াতী এবং পাপিয়া কুদ্দুস ও তার দল গান পরিবেশন করেন।