বিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য ঃ বর্তমান অবস্থা ও করণীয়
মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হচ্ছে খাদ্য। অতি মুনাফালোভী কৃষক, উৎপাদনকারী, মজুতকারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা সেই খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি, ডিডিটি, কীটনাশক, কাপড়ের রং, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিশিয়ে ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন কোন খাদ্যদ্রব্য নেই যাতে বিষ ও ভেজাল মিশানো হয় না। উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ প্রত্যেকটি স্তরেই এর ছড়াছড়ি। সহজপ্রাপ্যতা, আইনী দুর্বলতা আর যথাযথ নজরদারির অভাবে এসব ঘটেই চলেছে, যাতে রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাচ্ছে। 
 
আমরা এখন কিছুই যেন নির্ভয়ে-নিশ্চিন্তে খেতে পারছি না। বাজার থেকে কিছু কিনতে গিয়ে থমকে দাঁড়াতে হয়, দ্রব্যটি নিরাপদ না বিষযুক্ত। এমনটা তো চলতে পারে না! তাই মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবন রক্ষায় নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া দরকার । খাদ্যই যদি নিরাপদ না হয়ে বিষযুক্ত হয়, তবে আমরা ধীরে ধীরে পংঙ্গু জাতিতে পরিনত হব ।
 
অতি মুনাফালোভী কৃষক, উৎপাদনকারী, মজুতকারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি, ডিডিটি, কীটনাশক, কাপড়ের রং, রেল ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোটর যান, নৌ যান ও কলকারখানার পোড়া তেল ও মবিল মিশ্রিত তেল, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথেফেন, অৎঃরভরপধষ ঐড়ৎসড়হব এৎড়ঃিয ব্যবহার করছে। কৃষিজাত পণ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। মিষ্টিতে কাপড়ের রং প্রয়োগ করা হয়। শুটকি মাছ সংরক্ষণে ডিডিটি ও হেপ্টাক্লোর ব্যবহার করা হয়। ডিডিটি, অ্যালড্রিন, ক্রোমিয়াম, কার্বামেট, আর্সেনিক, সীসাÑ সবই মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কৃষিতে কীটনাশকের ব্যাপক অপপ্রয়োগ এবং মাত্রাতিরিক্ত সার ব্যবহার দেশের জনস্বাস্থ্যকে বিশাল ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। কৃষিপণ্যকে কীটনাশক থেকে রক্ষা করা গেলে মানুষ অনেকটা স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত হতে পারে। 
 
নানা ধরনের বিষাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুতকৃত নিম্নমানের খাদ্য গ্রহন করে আগামী প্রজন্ম বিভিন্ন গুরুতর অসুখের ঝুঁকি নিয়ে বড় হচ্ছে। ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। গর্ভবতী মহিলারা জন্ম দিতে পারে বিকলাঙ্গ শিশু, গর্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার আশংকাও থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এসব খাবার খাওয়ার ফলে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ক্যান্সার জাতীয় রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কিছু খাবার এমনই বিষাক্ত যে তা ডিএনএকে পর্যন্ত বদলে দিতে পারে। কিডনী ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৬ ভাগ মানুষ কিডনী রোগে আক্রান্ত এবং রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলেই কিডনী রোগ হচ্ছে। প্রতিমাসে ক্যান্সার, কিডনী ও লিভার রোগী দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। দীর্ঘদিন বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে গর্ভবতী মা ও তার পেটের ভ্রæনের ক্ষতি হয়, সন্তানও ক্যান্সার, কিডনীসহ মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন ও প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হচ্ছে। খাদ্যের সক্সেগ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গ্রহণের পরে নিঃশেষ না হয়ে দেহের ভিতর দীর্ঘদিন জমা থাকে। ফলে এ বিষক্রিয়া বংশ থেকে বংশে স্থানান্তর হয়।
 
জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারে ৮২টি খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করা হয়। এতে গড়ে ৪০ শতাংশ খাদ্যেই মানবদেহের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি নিষিদ্ধ উউঞ (উরপযষড়ৎড়-ফরঢ়যবহুষ-ঃৎরপযষড়ৎড়বঃযধহব), অষফৎরহ, ঈযষড়ৎফধহব, ঐবঢ়ঃধপযষড়ৎ এবং অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান পাওয়া যায়। এসব রাসায়নিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাকসবজির নমুনাতেই বিষাক্ত বিভিন্ন কীটনাশকের উপস্থিতি রয়েছে। চালের ১৩টি নমুনায় মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত বিষক্রিয়া সম্পন্ন আর্সেনিক, পাঁচটি নমুনায় পাওয়া গেছে ক্রোমিয়াম। হলুদের গুঁড়ার ৩০টি নমুনায় ছিল সীসা ও অন্যান্য ধাতু। লবণেও সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২০-৫০ গুণ বেশি সীসা পাওয়া গেছে। মুরগির মাংস ও মাছে পাওয়া গেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব। হলুদ ও লবণে সীসাসহ আরো কিছু ধাতব উপাদান প্রয়োগের মাধ্যমে এগুলো চকচকে ও ভারী করা হয়।
 
মৎস্যসম্পদ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মাছে ব্যবহƒত কীটনাশকের মধ্যে ৬০ শতাংশ চরম বিষাক্ত।  আর কৃষিজমিতে ব্যবহƒত কীটনাশকের প্রায় ২৫ শতাংশই জমিসংলগ্ন জলাশয়ের পানিতে মেশে। এ ছাড়া ওই কীটনাশক প্রয়োগের জন্য ব্যবহƒত যন্ত্রপাতি বা উপকরণ পরিষ্কার করতে গিয়ে আরো কিছু কীটনাশক পুকুর বা নালার পানিতে চলে যায়। এতে একদিকে যেমন সরাসরি মাছ ও মাছের ডিমের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, অন্যদিকে পানিতে থাকা মাছের খাদ্য ফাইটোপ্লাংকটন (উদ্ভিদকণা) ও জুপ্লাংকটন (প্রাণিকণা) তাৎক্ষণিক মরে যায়। ফলে জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মাছের খাদ্য নষ্ট হয়, পানি নষ্ট হয়। আবার মাছ থেকে তা মানবদেহে চলে যায়।
 
ঢাকার আশপাশে প্রচুর সংখ্যক টেক্সটাইল ও ডাইং ইন্ডাস্ট্রি আছে। এসব টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিভিন্ন ধরণের বর্জ্য বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীতে ফেলা হয়। এছাড়াও সাভারের ট্যানারীর বিষাক্ত বর্জ্য ধলেশ্বরী নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদীর বিষাক্ত পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে শাকসবজি ও ধান এবং মাছে ভারী ধাতু যেমন লেড, আর্সেনিক, কেডমিয়াম ও মারকারী-এর মিশ্রণ ঘটে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যšত ক্ষতিকর। 
 
কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষিতে কীটনাশক পরিমাণমতো ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও মাঠে কী হচ্ছে, তা যথাযথভাবে নজরদারী করা হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার যেমন করা হয়, তেমনি কীটনাশক ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট সময় পর শস্য বা ফল বাজারে নেওয়ার কথা থাকলেও সে পর্যšত অপেক্ষা করা হয় না।  দেশে চাল, মাছ, সবজি, মসলা এবং ফলমূলে ব্যাপকভাবে বিষাক্ত রাসায়নিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা থাকলেও মাঠপর্যায়ে কৃষককে সচেতন করে তোলার মতো তেমন কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায় না। সরবরাহকারী  প্রতিষ্ঠান সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ অনেক রাসায়নিক পদার্থের বিক্রি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। অনেক কীটনাশক লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন এবং কৃষকদের কোনো সুস্পষ্ট সতর্কবার্তা বা নির্দেশাবলী  ছাড়া বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষিতে কী ধরনের কীটনাশক-বালাইনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে তা দেখভালের দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। ফলে কৃষি পণ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়ানোর দায়ভার কৃষি মন্ত্রণালয় তথা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এড়াতে পারে না। 
 
মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে বিএসটিআই লবন, হলুদ, গুড়া মরিচ, কারি পাউডার,সরিষার তেল, বোতলজাত খাবার পানি, মাখন, আটা, ময়দা, নুডলস, বিস্কুটের ৪০৬টি নমুনা পরীক্ষা করে এবছরের মে ও জুন মাসে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। দাখিলকৃত প্রেিবদনে দেখা যায় যে ৪৬টি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ৭৪টি পণ্য নি¤œমানের। আদালত এসব পণ্য বাজার থেকে অপসারণ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রত্যাহারের নির্দেশ প্রদান করেন। আদালত সরকারকে মাদকের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক যুদ্ধের মতো “খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”করার অনুরোধ জানান। 
 
দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ ভেজাল ও নি¤œমানের খাবারের ঝুঁকি সম্পর্কে অজ্ঞ। ভেজাল ও নি¤œমানের খাবারের সমস্যা কেবল আইনী সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক ও আচরণগত সমস্যা। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দেশে ১৫টি আইন রয়েছে। এসব আইনে খাদ্য দূষণকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করা হলেও সমস্যাটি রোধ করতে খুব কম কাজ হয়েছে।
দুধ ও দুধজাত পণ্য,ফলমূল ও ফলের পানীয়, শাকসবজি, স্যুপ, মাছ ও মাছজাত পণ্য, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীতে ক্ষতিকারক ভেজাল যেমন আর্সেনিক, রাসায়নিক রং, ধাতু, সার, কীটনাশক, নি¤œ মানের কাঁচামাল ব্যবহার করার জন্য পবাসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন, ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠী এবং গণমাধ্যম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের কয়েক বছর ধরে অভিযুক্ত করে আসছে। কৃষি পণ্যে বিপজ্জনক বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি এবং কীটনাশক, টক্সিন, খাদ্য সংযোজক ও সংরক্ষক নির্বিচারে ব্যবহার সম্পর্কে রির্পোট করা হলেও এবিষয়ে খুব কম গবেষণা হয়েছে।
 
অনেকেই মনে করেন যে খাদ্য ভেজালকারীরা সমাজের বৃহত্তম সন্ত্রাসী এবং জাতির শত্রæ। তারা খাবার দূষিত করে মানুষকে হত্যা করছে বলে তাদের মৃত্যুদন্ডের সাজা দেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে ভেজাল ও নি¤œমানের খাবার গ্রহণের ফলে অপুষ্টি, খাদ্যজনিত বিষক্রিয়া এবং ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। দূষিত খাবার মানবদেহে ধীরে ধীরে বিষাক্ত প্রভাব ফেলে এবং যা প্রাণনাশক হতে পারে। দেশে কিডনি ও পেটের ক্যান্সারের সাম্প্রতিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে ভেজাল খাবার। দূষিত খাবার গ্রহণকারী মায়েদের জন্মগ্রহণকারী শিশুরা অপুষ্টি, ক্যান্সার  এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে। ভোক্তা, ব্যবসায়ী, কৃষক এবং কর্তৃপক্ষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে। আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে কেবল আমাদের বর্তমান নয় আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মেরও মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে।
বিষযুক্ত খাদ্যের ভয়াবহ বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশে জৈব কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন ও একে জনপ্রিয় করে তোলা। যা জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রকেও রক্ষা করবে। জৈব কৃষি ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করতে কৃষক, বিক্রেতা ও ভোক্তাদের মধ্যে সচেনতা সৃষ্টি করতে হবে। রাসায়নিকযুক্ত খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন ব্যবস্থাকে নিরুৎসাহিত করে জৈব খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষে দেশব্যাপী প্রচারণা চালাতে হবে।
 
ফল ও সবজি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ফল ও সবজি আমাদের পুষ্টি, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের চাহিদা মেটায়; রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। কিন্তু অসাধু বিবেকবর্জিত ব্যবসায়ী চক্রের দুষ্কর্মের কারণে ফল ও সবজি পরিণত হয়েছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং আশংকার বিষয়। আমরা নিরাপদ ফল ও সবজি গ্রহণ করতে চাই। ফল ও সবজির চাষাবাদ এবং বাণিজ্যের প্রসার চাই। কিন্তু যাদের অপকর্মের জন্য ফল ও সবজিসহ কৃষিপণ্য জনস্বাস্থ্যের  জন্য আতংকের বিষয়ে পরিণত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে জনগণকে অধিকতর সচেতন করতে হবে।
 
বিষাক্ত খাদ্যের ভয়াবহতা বিবেচনায় বর্তমান সরকার ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫, নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করেছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় সংসদ কর্তৃক সুনিদিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার যথাযথ উদ্যোগ ও অঙ্গীকারের অভাব, বিষাক্ত খাদ্যের ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনুধাবনে উদাসীনতার ফলে আমরা জনগণ এর কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছি না। সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কর্তৃক এসব আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা যেতে  পারে। অন্যথায় বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে ধীরে ধীরে আমরা পংঙ্গু জাতিতে পরিণত হব। 
 
করণীয়
* খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানোর সাথে জড়িত এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদিযুক্ত ও ভেজাল খাদ্য বিক্রয়কারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দন্ড প্রদান অব্যাহত রাখা।  
* ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯, নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। 
* জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্যে বিষ বা ভেজালরোধে কোন রকম বৈষম্য বা রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই আইন প্রয়োগে সরকারের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
* বিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারকে খাদ্যে বিষ ও ভেজাল মিশ্রণের উৎসমূল থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
* সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী এবং লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
* সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা। 
* গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার- প্রচারণার মাধ্যমে কৃষক, উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের রাসায়নিক দ্রব্যাদি, কীটনাশক, ভেজাল মিশ্রনের ক্ষতিকর দিক এবং আইনে বর্ণিত দন্ড তুলে ধরে সচেতন করা। 
* পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআর কর্তৃক বন্দরসমূহে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করা। 
* শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপনে শিল্প মালিকদের বাধ্য করা। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
*      খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা।
* বিষযুক্ত খাদ্যের ভয়াবহ বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশে জৈব কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন ও একে জনপ্রিয় করে তোলা। 
 
প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান
সাধারণ সম্পাদক, পবা এবং
সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর