বিশ্ব কারমুক্ত দিবস ২০১৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে যানজট হ্রাসে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান

ঢাকা শহরে প্রাইভেট কারে পাঁচ শতাংশ ট্রিপ হয় এবং এজন্য সড়কের সত্তর ভাগ জায়গা দখল করে রাখে। এরপরও ঢাকা কোন ধরনের প্রতিদিন শতাধিক নতুন প্রাইভেট কারের নিবন্ধন দেওয়া হয়। এছাড়া প্রাইভেট কারের বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে পার্কিং সুবিধা, লোন সুবিধা, ফ্লাইওভার ও উড়াল সড়ক নির্মাণ এবং সড়কে অগ্রাধিকারসহ নানা সুবিধা রয়েছে। অপরদিকে বাস, রেল, নৌপথ, হাঁটা ও রিকশা এ সকল মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ চলাচল হলেও এ মাধ্যমগুলির জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয় নি। তাই অনেকেই বাধ্য হয়েই প্রাইভেট কার কিনছেন। হাঁটা, সাইকেল, রিকশার সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে প্রাইভেট কারের উপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব। এজন্য সঠিক ও নীতি পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করে একটি সুষ্ঠু পরিবহন সংষ্কৃতি গড়ে তোলা জরুরী। বিশ্ব কারমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫, সোমবার সকাল ১০ টায় পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত উদ্যোগে লুডু, দাবা, ক্যারামবোর্ড, ফুটবল, চেয়ার খেলা, দড়ি লাফ, সঙ্গীত, সাইক্লিং, হোলাহোপসহ বিভিন্ন আয়োজনে কর্মসূচি থেকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। 

 
আবু নাসের খান, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বলেন, ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করার কথা বলা হয় কিন্তু যে পরিকল্পনাসমূহ গ্রহণ করা হচ্ছে তা ঢাকা শহরকে আরো বেশি বসবাস অযোগ্য করে তুলবে। যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ একমাত্র সমাধান। এ লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের এ আন্দোলন তরুণ সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করে আন্দোলনকে আরা সুদূরপ্রসারী করতে হবে।  
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এলসি, এনসিডি, মারুফ হোসেন বলেন, ২টি প্রাইভেট কার একটি বাসের সমান জায়গা নেয়। প্রায়শই দেখা যায় প্রাইভেট গাড়িতে একজন যাত্রী চলাচল করে বা ফাঁকা থাকে। একটি বাসে একটি ট্রিপে রুটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ২০০ যাত্রী বহন করে। প্রাইভেট কার পার্কিং এর জন্যও ১৬০ বর্গফুট জায়গা নেয় এবং ৯০ ভাগ সময় পার্কিং অবস্থায় থাকে। তিনি বলেন, “জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যম ভিত্তিক পরিবহন নীতিমালা, ২০১৩” তে “৪.৮.১ প্রাইভেট কার নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন এখন সময়ের দাবি। 
 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাবেক সাধারন সম্পাদক মহীদুল ইসলাম খান বলেন, সারা বিশ্বে যখন প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে সেখানে আমরা চলছি উল্টো পথে। নগর পরিকল্পনা মানুষের জন্য হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে মানুষকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। আমরা আমরা সকলেই বুঝতে পারছি প্রাইভেট কার আমাদের যানজট সৃষ্টিতে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও আমরা এ বিষয়ে দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছি না। প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে পাবলিক বাসে সেবামান বাড়াতে হবে। নিরাপদ ডেভলেপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা বলেন, ঢাকার শহরে আমাদের সবাইকে যাতায়াত করতে গিয়ে পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। যানজট নিরসনের নামে গণপরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে যানজট এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্যের কারণে পথচারীদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে বড় শহরগুলোতে এ সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে ছোট শহরগুলোতেও এ সমস্যা ছড়িয়ে পড়বে। এখনই যদি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে ঢাকা শহরকে বসবাসযোগ্য শহরে পরিণত করা সম্ভব হবে না।
 
ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারির, সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন, তামিম আহামেদ, অরগানাইজিং সেক্রেটারি, ইন্টারন্যাশনাল টুরিজম স্টুডেন্টস কনফেডারেশন, আকিব দিপু, সদস্য, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, মোঃ আমিনুল ইসলাম টুববুস, সভাপতি, সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, সাজেবিন কবির, নগরবিদ, এভান্টগার্ডস, শাহ মোবারক, সভাপতি, ইয়র্থ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজনীন কবীর ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এইচআর এনসিডি, সৈয়দা অন্যন্যা রহমান এবং মাস্তুল ফউন্ডেশনের মনির হোসেন নিশাত প্রমুখ।